বাংলা চলচ্চিত্রের নায়িকা
আমি এসেছি, দেখলাম, জয় করলাম। প্রায় সকলেই এই কথাটি জানেন এমন অনেক লোক আছেন যারা অল্প সময়ের মধ্যে একটি স্থায়ী ছাপ তৈরি করতে পেরেছেন। ক্ষণিকের জন্ম বা খুব সামান্য কাজ দিয়ে সবার মনে জায়গা করে নেওয়ার পর নিজেকে আড়াল করে নেন। বাংলা ছবিতেও এমন কিছু নায়িকার আবির্ভাব ঘটেছে, যারা কালের স্রোতে হারিয়ে গেলেও তাদের সাময়িক পর্দায় উপস্থিতি দর্শকদের মনে একটি প্রাণবন্ত জায়গা ধরে রেখেছে। হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে তারকা বনে যাওয়া ঢালিউডের এই নায়িকাদের চলচ্চিত্রপ্রেমীরা এখনো মনে রেখেছেন।
আরও পড়ুন: প্রস্তাবের সময় লাল শাড়ি পরেছিলাম: অপু বিশ্বাস
'হৃদয়ের আয়ানা' ছবির নায়িকা জেবা এমন একজন নায়িকা যিনি নিজেকে আড়ালে রেখেও মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন। 1997 সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'হৃদয়ের আয়ানা' ছবিটি অনেকেরই মনে থাকতে পারে। ছবিটিতে তৎকালীন হিট নায়ক রিয়াজের বিপরীতে নবাগত জেবাকে অভিনয় করা হয়েছিল। মিষ্টি প্রেমের এই ছবিতে রিয়াজ চরিত্রে 'হৃদয়' এবং 'আয়না' চরিত্রে অভিনয় করে বেশ খ্যাতি পান জেবা। সেই একটি সিনেমাতেই হারিয়ে গেলেন এই প্রতিশ্রুতিশীল নায়িকা। তাকে আর কখনো পর্দায় দেখা যায়নি।
'প্রাণের চেয়ে প্রিয়' ছবিটি নায়ক রিয়াজের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। 1997 সালে, মোহাম্মদ হান্নান পরিচালিত ব্লকবাস্টার সিনেমা 'প্রাণের চেয়ে প্রিয়'-তে রিয়াজের বিপরীতে অভিনয় করে নবাগত রাভিনা নজর কেড়েছিলেন। পরে রিয়াজের সঙ্গে আরেকটি সিনেমায় অভিনয় করলেও সেটি ছিল ফ্লপ। এরপর আর অভিনয়ে দেখা যায়নি রাভিনাকে। কোথায় আছেন এই নায়িকা, কেমন আছেন তাও অজানা।
এবার আসা যাক বাংলা ছবির আরেক সম্ভাবনাময় নায়িকার কথা। প্রথম সিনেমাতেই তার অতুলনীয় অভিনয় বাংলার কোটি দর্শকের হৃদয়ে পৌঁছে যায়। বলছি অভিনেত্রী সিমলার কথা। যিনি অভিষেকের সিনেমায় 'ফুলি' ও 'সিমলা' নামের দুটি চরিত্রে অভিনয় করে 'জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার' অর্জন করেন। ১৯৯৯ সালে শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত সিনেমায় সিমলার অভিনয় দেখে অনেক চলচ্চিত্র গুরু তাকে নিয়ে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে আলো ছড়াতে পারেননি এই নায়িকা। বরং সমালোচনা ছড়ান।
নব্বই দশকের শুরুতে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন অন্তরা। ঐতিহাসিক ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত 'সিরাজউদ্দৌলা' ছবিতে তিনি প্রথম প্রবীর মিত্রের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। বড় হয়ে 'পাগল মানুষ' ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করে ব্যাপক আলোচিত হন অন্তরা। এরপর আরও বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেন। 8 জানুয়ারী, 2014 তারিখে হঠাৎ সেরিব্রাল হেমারেজের কারণে তিনি মারা যান। তবে অন্তরার পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। অন্তরা চোখের আড়াল হলেও মনের আড়াল নয়। আজও তিনি রয়ে গেছেন অসংখ্য দর্শকের হৃদয়ে।
অভিনেত্রী তামান্নাহ ১৯৯৫ সালে আফজাল হোসেন পরিচালিত একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে অভিনয়ের মাধ্যমে মিডিয়ায় আত্মপ্রকাশ করেন। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সাইফুল আজম কাশেম পরিচালিত 'ত্যাজ্যপুত্র'। তার নায়ক ছিলেন বাপ্পারাজ। প্রথম ছবিতেই তার অভিনয় নজর কেড়েছিল। এরপর শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘ভাণ্ড’ সিনেমায় কুংফু হিরো রুবেলের বিপরীতে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান তামান্না। ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তার শেষ ছবি ছিল 'পাগল তোরে রে'। এরপর হঠাৎ করেই দেশ ছেড়ে, অভিনয় ছেড়ে সুইডেনে চলে যান এই অভিনেত্রী। সেখানে স্বামীর সঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তিনি।
২০০২ সালে ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় 'কেন অহবরম' ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে নাম লেখান রত্না। নায়ক ছিলেন ফেরদৌস। একই বছর কাজী হায়াত পরিচালিত ‘ইতিহাস’ ছবিতে কাজী মারুফের বিপরীতে অভিনয় করে সবার নজরে আসেন এই অভিনেত্রী। তিনি প্রায় ৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। 2015 সালে, রত্নার ক্যারিয়ার হঠাৎ ভেঙে পড়ে। সেই ধসে হারিয়ে গেলেন সম্ভাবনাময় এই নায়িকা।
একসময় অভিনয় দিয়ে বেশ সাড়া পান অভিনেত্রী একা। প্রখ্যাত পরিচালক কাজী হায়াতের 'তেজি' ও 'ধর' সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে তাকে নায়ক মান্নার বিপরীতে দেখা গেছে। সে সময় এই জুটি দর্শকদের কাছে বেশ সাড়া ফেলেছিল। কিন্তু নায়ক মান্নার মৃত্যুর পর বেশ কয়েকজন নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করলেও একা নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। দীর্ঘদিন অভিনয় থেকে দূরে রয়েছেন তিনি। ছোট বা বড় কোনো পর্দায় তাকে দেখা যায় না।
অভিনেত্রী ইরিন জামান অভিনয় জগতে আসেন ১৯৯৯ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘অনন্ত বলশা’ ছবির মাধ্যমে। নায়ক ছিলেন বর্তমান সুপারস্টার শাকিব খান। এটি ছিল দুজনের প্রথম ছবি। সেই ছবিতে একটু নজর কেড়েছিলেন অভিনেত্রী মৌসুমীর ছোট বোন ইরিন জামান। এরপর বেশ কয়েকটি ছবিতে দেখা গেলেও সাফল্য পাননি। প্রথম ছবির নায়ক শাকিব ছবিতে রাজত্ব করলেও ইরিন হারিয়ে যান। বর্তমানে তিনি তার স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় থাকেন।
এক বা একাধিক সিনেমা দিয়ে পর্দায় আবির্ভূত এই নায়িকারা সময়ের সাথে নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন, তবে তাদের কারও কারও কাজ এখনও বাংলা সিনেমার দর্শকদের তাদের প্রিয় মুখের কথা মনে করিয়ে দেয়।

0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন